পরিবহণ আইন লংঘনে রাজকণ্যার জরিমানা – গণতন্ত্রের ভিন্ন রূপ

যুক্তরাজ্যের রাণী এলিজাথের দ্বিতীয় ও একমাত্র কণ্যা এ্যানকে পরিবহন আইন লংঘন করার অপরাধে ৪৩০ ব্রিটিশ পাউন্ড বা ৩৪,৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৫০ বছর বয়স্কা রাজকণ্যা নির্ধারিত সড়কে পরিবহণ আইন অনুমোদিত ঘন্টায় ১১২ কিলোমিটারের পরিবর্তে ১৪৯ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানোর অপরাধে পুলিশের হাতে ধরা পরার পর আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

এটাই রাজকণ্যার প্রথম জরিমানা নয়! ১৯৭২ সালে পরিবহণ আইন লংঘনের অপরাধে পুলিশ তাকে লিখিতভাবে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে; মাত্র ৫ বছর পর ১৯৭৭ সালে একই অপরাধে তাকে ৪০ ব্রিটিশ পাউন্ড বা ৩,২০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে স্থানীয় ম্যাজিষ্ট্র্যাট একই ধরনের দুটি মামলায় রাজকণ্যাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৫০ ব্রিটিশ পাউন্ড বা টাকা ১২,০০০ টাকা জরিমানাসহ একমাস তার গাড়ি চালানোর উপড় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।

এবারের মামলার রায়ের দিন তিনি পশ্চিম ইংল্যান্ডের একটি আদালতে ব্যাক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে না পারায় আদালতের সমীপে ক্ষমা প্রার্থণা করে তার আইনজীবির মাধ্যমে একটি চিঠি প্রেরণ করেছেন। চিঠিতে তিনি তার বক্তব্য পেশ সমেত দোষ স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রাজকণ্যা এ্যানের বাসস্থান লন্ডন হলেও তিনি পশ্চিম ইংল্যান্ডের একটি শহরে আইন ভঙ্গ করেছে বলে ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী তার বিচার পশ্চিম ইংল্যান্ডের আদালতেই হয়েছে।

ব্যাকিংহ্যাম রাজপ্রাসাদ থেকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে যে, ”রাজকণ্যা মেনে নিয়েছেন যে, তিনি দেশের প্রচলিত সাধারণ আইন কানুন মেনে চলতে বাধ্য এবং আদালত কতৃক নির্ধারিত জারমানা যথাসময়ে পরিশোধ করবেন”। বিচারপতি Mr. Graham Sacker জানিয়েছেন যে, ”আদালতের রায় রাজকণ্যার যথাযোগ্য সম্মানের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে এবং এটা ছিল অতি সম্মানী নাগরিকের একটি অতি সাধারণ অপরাধ”।  এখানে বিচারপতি বলতে চেয়েছেন যে, রাজকণ্যা হিসেবে আদালত তাকে সম্মান করলেও দেশের প্রচলিত আইন প্রত্যেক ণাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

এটা শুধু যুক্তরাজ্যের নয় বরং পৃথিবীর উন্নত যে কোন দেশের ঘটনা হতে পারত। যেমন, জার্মানীতে গত কয়েক বছরে উর্ধতন আমলা, মন্ত্রী, প্রাদেশিক মন্ত্রীসহ বহু গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে তাদের অতি সম্মানী ও ক্ষমতাশালী পদ ছেড়ে আদালতে হাজিরাসহ কারাগারে নির্ধারিত সাজা ভোগ করতে হয়েছে। জার্মানীর ভূতপূর্ব চ্যন্সেলর হেলমুট কোল পর্যন্ত আইনের কঠোর হাত তিলে তিলে উপলব্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তার রাজনৈতিক দল কতৃক গৃহীত দান দলের বাৎসরিক আয় ব্যয়ের খতিয়ানে আইন মোতাবেক উল্লেখ করা হয়নি। যদিও ঐ বাৎসরিক প্রতিবেদন সে নিজে হাতে প্রনয়ণ করেনি তবুও দলের প্রধান হিসেবে এ গাফিলতি বা ভুলের জন্য তিনিও দোষীদের একজন! দীর্ঘ ১৬ বছর জার্মানীর সরকার প্রধান থাকা সত্বেও আইন তাকে কোন প্রকার সহানুভূতি প্রদর্শন করেনি।

রাজকণ্যার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

রাজকণ্যা এ্যান ১৯৫০ খ্রীষ্টাব্দে ১৫ই আগষ্ট লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন এবং পুরো নাম Anne Elizabeth Alice Louise। ব্যাকিংহ্যাম রাজপ্রাসাদে প্রতিষ্ঠাণিক শিক্ষার পরিবর্তে গৃহশিক্ষক কতৃক রাজকণ্যার শৈশবকালে লেখাপড়ার হাতে খড়ি। তিনি ১২ বছর বয়সে ১৯৬২ খ্রীষ্টাব্দে শিক্ষা সফরে ফ্রান্স গমণ করেন ও তার পরবর্তি বছর Kent শহরে Benenden আবাসিক শিক্ষালয়ে যোগদান করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকে তিনি রাণী এলিজাথের কণ্যা হিসেবে সকল বেসরকারী ও সরকারী অনুষ্ঠাণে যোগদান করে থাকেন। ১৯৬৯ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম বারের মত তিনি সরকারী ভাবে Shropshire শহরে একটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। একই বছরের মে মাসে তিনি তার মা বাবার সহিত প্রথম সরকারী সফরে অষ্ট্রিয়া গমন করেন।

রাজকণ্যা এ্যান ১৯৭৩ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই নভেম্বর রাজপ্রহরী ল্যাফটেন্যান্ট Mr. Mark Phillipsকে বিবাহ করেন। তাদের প্রণয়ের মাত্র ৪ মাস পর একটি সেবামূলক চিত্রপ্রদর্শণী থেকে গাড়ীতে ব্যাকিংহ্যাম রাজপ্রাসাদে ফেরার পথে আঁততায়ী কতৃক আক্রান্ত হন। রাজকণ্যা ও তার পতি অক্ষত অবস্থায় বেঁচে গেলেও তাদের দেহরক্ষী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়। ১৯৯২ খ্রীষ্টাব্দে রাজকণ্যা এ্যনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। একই বছরের ১২ই ডিসেম্বর তিনি রাজকীয় নৌবাহিনীর ক্যাপট্যাইন Mr. Timothy Laurenceকে এক ঘরোয়া পরিবেশে বিবাহ করেন।

১৯৭৭ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ই নভেম্বর রাজকণ্যা এ্যনের প্রথম সন্তান Mr. Peter Mark Andrew Phillips (ছেলে) ও ১৯৮১ খ্রীষ্টাব্দের ১৫ই মে দ্বিতীয় সন্তান Ms. Zara Anne Elizabeth (মেয়ে) জন্মগ্রহণ করে। রাজকণ্যা এ্যান স্বপরিবারে Gloucestershire শহরে Gatcombe Park এর রাজভবনে বাস করেন।

-: সমাপ্ত :-