যেখানে শুটকির হাটে বিড়াল চৌকিদার
বাংলাদেশে মনে হয় কোন রাজ রাজারত্ম নাই। আর থাকলেও তার সন্ধান পাওয়া নিশ্চয় বেজায় দূরহ! তা নাহলে অবশেষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং কেন রাজ রাজারত্মের খোঁজে বের হবেন? অবশ্য তিনি রাজ রাজারত্মের সন্ধানে নয় বরং বাংলাদেশে গত এক বৎসর যাবৎ বিরাজমান শেয়ার বাজারের অপ্রতিরোধ্য দরপতনের কারণ বিশ্লষণ ও উহার সম্ভাব্য প্রতিকারের পন্থা খুঁজে বের করার লক্ষে আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সারে সাতটায় তার সরকারী বাসভবন, গণভবনে জরুরী সভা অহ্বান করেছেন। সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে স্বভাবতঃ কারণেই মাননীয় অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যঙ্কের গভর্ণর, সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সরকারী বেসরকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
আসলে রাজ রাজারত্ম কে? আর কেনই বা বাংলাদেশের মত একটা সুন্দর ও সত্যের দেশের স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার সর্বসক্ষম মন্ত্রী ও আমলাবর্গ নিয়ে তার খোঁজে বের হবেন?
সত্যিকার রাজ রাজারত্ম হলেন একটি বিখ্যাত সেলাই মেশিন প্রস্তুতকারী কোম্পানীর ব্যাবস্থাপকের সন্তান ও প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ধনাঢ়্য একজন মার্কিন নাগরিক – নিউ ইয়র্কের ওয়ালষ্ট্রীটের এক সময়কার উদীয়মান তারকা।
তার আরো পরিচয় হল, তিনি গত ১৬ই অক্টোবর ২০০৯ খ্রীঃ মার্কিন পুঁজিবাজারের গোপন তথ্য ব্যাবহার করে বেআইনীভাবে শেয়ার ব্যাবসা (ইনছাইডার ট্রোডিং) করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন। গত ১১ই নভেম্বর ২০১১ খ্রীঃ নিউ ইয়র্কের একটি আদালত তাকে মোট ১৪টি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ১৩ই নভেম্বর ২০১১ খ্রীঃ ৯২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৬০ মিলিয়ন ডলার লাভ করেছিল) আর্থদন্ড ও প্রায় একযুগ সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার যে এ দেশের রাজ রাজারত্মদের দখলে তা নিয়ে তো আর কম লেখালেখি, আলাপ আলোচনা, তর্কবিতর্ক হয় নাই। এ ব্যাপারে দেশী রাজ রাজারত্মদের দলবল ছাড়া কারোর বিন্দু বিস্বর্গ সন্দেহ আছে বলেও মনে করা অনুচিৎ হবে। সম্প্রতি পুঁজিবাজার বিষয়ক একটি প্রতিবেদনে নাম, ঠিকানা, পরিচয়সহ সম্ভাব্য দেশী রাজ রাজারত্মদের সনাক্ত করা হলে সেই প্রতিবদনটি প্রকাশ না কারার নাটক ও ক্ষূদ্র বিনিয়োগকারীগণসহ দেশের জনগণ হতবাক হয়ে দেখেছেন। সবার মনে প্রশ্ন যে, এ প্রতিবেদনটি গোপন রেখে কোন রাজ রাজারত্মদের স্বার্থ রক্ষা করার চেষ্টা চলছে?
গত এক বৎসর যাবৎ দেশের পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন কোনভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি গেছে আগেই। এখন প্রতিদিনই বাড়ছে দেনা। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সর্বস্ব হারিয়ে এখন রাজপথে। ঈদের পর টানা তিন দিনের দরপতনের ধাক্কায় দেশের শেয়ারবাজার এখন হয়ে পড়েছে মৃতপ্রায়। টানা তিন দিনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক কমেছে প্রায় ৫৬০ পয়েন্ট। এর মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই কমেছে ২২৮ পয়েন্ট। গতকাল মঙ্গলবার (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক ছিল গত দুই বৎসরের মধ্যে সর্বনিন্ম! অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক তিন দিনে প্রায় এক হাজার ৩৯২ পয়েন্ট কমে গেছে। আর গতকাল এক দিনে কমেছে প্রায় ৫৬১ পয়েন্ট।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ও এসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলামের মতে, ‘সম্পূর্ণ বিনিয়োগযোগ্য একটি বাজারে এ ধরনের দরপতনের যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না। কেন বিনিয়োগকারীরা এখনো বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না তাও বোধগম্য নয়। বাজারের এ অবস্থা উত্তরণে ব্যক্তিশ্রেণীর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার। কারণ আমাদের বাজার এখনো ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারীনির্ভর।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিনিয়োগযোগ্য একটি বাজারে বড় দরপতনের পেছনে কোনো কারসাজি আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা দরকার। কারা এই বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ তৈরি করছে, সেটি খতিয়ে দেখা উচিৎ।’
বাজার স্থীতিশীল কারার লক্ষ্যে এ যাবৎ গৃহিত সকল হস্তক্ষেপ প্রমাণীতভাবে ব্যার্থ হয়েছে। এবার যেহেতু শুটকির হাট থেকে বিড়াল তাড়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং মাঠে নেমেছেন সেহেতু বিনিয়োকারীগণ কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হয়েছে। তবে বিড়ালগুলো ধরা তো দূরের কথা তিনি সেগুলো আদৌ খুজেঁ পাবেন কিনা তা দেখার জন্য জনগণ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। :- সমাপ্ত :-
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। কাউছার ভূইয়াঁ ১৯৯১ – ২০১১।