জার্মানীতেও দূর্নীতি আছে তবে…

বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ণ ব্যুরোর একজন পরিচালক ২০০২ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে অনুষ্ঠিত হস্ত ও কুটিরশিল্প প্রদর্শনিতে এসেছিলেন – সম্ভবতঃ বাংলাদেশ থেকে আগত প্রদর্শকদের তদারকীর দায়িত্ব পালন করতে।

জার্মানীসহ বাংলদেশের জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক বিষয় নিয়ে তার সাথে আলাপ হচ্ছিল এক জার্মান ব্যারিষ্টারের। আলাপের এক পর্যায় উভয়ই সম্মত হলেন যে, দূর্নীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। জার্মান ব্যারিষ্টার বললেন, হ্যাঁ আমি বাংলাদেশের পত্রিকায় দূর্নীতিতে আপনাদের শীর্ষস্থানের সংবাদ পড়েছি। সেখানে লেখা হয়েছে যে, ট্রন্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনালের দূর্নীতি সূচকে বাংলাদেশ গত ২০০১ খ্রীষ্ঠাব্দ থেকে আজ (২০০৪ খ্রীষ্ঠাব্দ) পর্যন্ত প্রতি বছরই প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে। সে ব্যাপারে আপনাদের সরকারের প্রতিবাদ সম্পর্কেও অবহিত আছি ইন্টানেটের বদৌলতে।

সদূর জার্মানীতে বসে একজন বিদেশী লোক বাংলাদেশ সম্পর্কে এত বিস্তারিত সংবাদ রাখে বুঝতে পেরে পরিচালক সাহেব এবার আকষ্মিকভাবে ইউ টার্ন নিয়ে মত পাল্টে ফেললেন। তিনি বাংলাদেশের দূর্নীতির বিষয়টাকে এবার এ বলে লাঘব করার চেষ্টা করলেন যে, দূর্নীতিতে আমাদের অবস্থান পৃথিবীতে প্রথম হবে না। কারণ, আমাদের চেয়েও দূর্নীতিগ্রস্থ দেশ পৃথিবীতে রয়েছে! আফ্রিকা মহাদেশের দেশসমূহের কথাই ধরুন না।

বিচক্ষণ ব্যারিষ্টার ভাবলেন যে, এ বিষয়ে আলোচনা বাড়িয়ে বিদেশী অতিথিকে আর বিড়ম্বনায় ফেলা উচিৎ হবে না। তাই তিনি দ্রুত আলোচনার বিষয় পবির্তন করার চেষ্টা করলেন। ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশ রপ্তানী উন্নয়ণ ব্যুরোর পরিচালক সাহেব ভাবলেন ব্যারিষ্টারের ভদ্রতার এ সুযোগে ছোটখাট একটা আক্রমন করা যাক। তার ভাবনা মোতাবেক পরিচালক সাহেব জার্মান ব্যারিষ্টারকে পাল্ট প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন যে, আপনাদের দেশে কি দূর্নীতি নেই?

ব্যারিষ্টার সাহেব পরিচালক সাহেবর অক্রমনের অপটুতা দেখে মুচকী হেসে বললেন, আমাদের দেশে অবশ্যই দূর্নীতি আছে। তা না হলে আমাদের দেশে আইন-আদালত রয়েছে কেন? কেন রয়েছে উকিল-ব্যরিষ্টার, মামলা-মোকদ্দমা, পুলিশ-হাকিম, জেল-হাজত এবং সর্বোপরি একটি সংবিধান?

আজ তাদের আলেচনার বিষয়টি হঠাৎ মনে পড়ল যখন জার্মানীর সবগুলো প্রধাণ পত্রিকা একযোগে জার্মানীর অন্যতম ফুটবল ক্লাবের প্রেসিডেন্টের গ্রেপ্তারের সংবাদ প্রথম পাতায় ছাপলো। সবগুলো টেলিভশন সংবাদ ফুটবল ক্লাবের প্রেসিডেন্টের বাসভবন, কার্যালয় ও ক্লাবের বিভিন্ন কক্ষ সাদা পোশাধারী পুলিশ কতৃক তল্লাশীর চলচ্চিত্র সম্প্রচারিত করল।

আসলেইতো জার্মার্নীতেও দূর্নীতি রয়েছে!

ফুটবল ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ও তার পুত্রের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ করে একটি নির্মাণ কোম্পানীকে একটি ক্রিড়াঙ্গণ নির্মাণ করার কাজ পেতে সহায়তা করার অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগকে দুর্নীতি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে ”নিজের স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহারকে দুর্নীতি বলে”।

বিশ্বফুটবল ফেডারেশন বা ফিফা জার্মানীকে ২০০৬ খ্রীষ্ঠাব্দে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের জন্য মনোনীত করেছে। এ মনোনয়নের পরপরই শুরু হয় বিভিন্ন ক্রিড়াঙ্গণের পুঃননির্মাণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ ব্যাপক প্রস্তুতি পর্ব। বিশ্বকাপ ফুটবল ২০০৬ উপলক্ষে দঃক্ষিণ জার্মানীর অন্যতম প্রধাণ শহর মিউনিখে নির্মিত হচ্ছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক ক্রিড়াঙ্গণ। ক্রিড়াঙ্গণটি নির্মিত হবে বেসরকারী খাতের অর্থায়নে। প্রধান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে মিউনিখ শহরেই অবস্থিত দু’টি প্রধান ফুটবল ক্লাব এফ.সি. বায়ার্ন ম্যুনসেন এবং টি.এস.ভি ১৮৬০ ম্যুনসেন ও একটি বীমা কোম্পানী।

ক্রিড়াঙ্গণটি নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় অষ্ট্রিয়ান একটি নির্মাণ কোম্পানী।

১৫০ টি নথি বিশ্লেষণ করে অভিযোগ আনা হয় যে, যে কোম্পনীটি নির্মাণকাজটি পেয়েছে সে কোম্পনীর নিকট গোপনে দরপত্রের তথ্য পাচার করা হয়েছে যে, সর্বোচ্চ ২৮০ মিলিয়ন ইউরোর দরপত্র গৃহীত হবে। সে মোতাবেক দরপত্র জমা দিয়ে অষ্ট্রিয়ান নির্মাণ কোম্পানীটি কাজটি পায়। আর এ তথ্য পাচারের ঘুষ বাবদ ২৮০ মিলিয়নের শতকরা একভাগ বা ২.৮ মিলিয়ন ইউরো সুইস ব্যংঙ্কে এক হিসাব নম্বরে জমা করা হয়েছে বলে অভিযোগে আরও বলা হয়।

জার্মানীতে দূর্নীতি আছে বটে তবে সে দশে আইন-আদালত, ওকিল-ব্যরিষ্টার, মামলা-মোকদ্দমা, পুলিশ-হকিম জেল-হাজত এবং সর্বোপরি একটি সংবিধান ও রয়েছে বলে মনে হচ্ছে! কারণ, সেখানে দূর্নীতির তদন্ত হচ্ছে, বিচার আছে।  -: সমাপ্ত :-

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত। কাউছার ভূইয়াঁ ১৯৯১ – ২০১১।